আমড়ার উপকারিতা, আমড়ার পুষ্টিগুণ ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলে খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই আমড়ার উপকারিতা, আমড়ার পুষ্টিগুণ ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে আমড়ার উপকারিতা, আমড়ার পুষ্টিগুণ ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক। আমাদের ওবেসাইট ভিজিট করতে ক্লিক করুন

 

আমড়ার পুষ্টিগুণ

প্রথমেই আমরা জানবো আমড়ার মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং সেগুলি আমাদের শরীরে কি কি উপকার করে। যেহেতু আমড়া একটি টক জাতীয় ফল, তাই এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। তাছাড়া আমড়াতে আরও রয়েছে শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, খনিজ পদার্থ ও খাদ্য শক্তি।

আমড়ার উপকারিতা

প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়াতে আছে ১৫ গ্রাম শর্করা, ১.১ গ্রাম প্রোটিন, ০.২ গ্রাম চর্বি, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.৯ মিলিগ্রাম আয়রন, ৮০০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন, ১০.২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ০.৬ মিলিগ্রাম খনিজ পদার্থ ও ৬৬ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি। তাহলে বুঝতেই পারছেন, একটি আমড়া খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের কতটুকু  ভিটামিন ও পুষ্টির অভাব পূরণ হতে পারে। আশা করি আমড়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনি জানতে পেরেছেন।

 

আমড়ার উপকারিতা

এ পর্যায়ে আমরা আমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানবো। আমড়া গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। গ্রীষ্মকালে রাস্তায় ফল বিক্রেতাদের হাতে বা ভ্যানে ফুলের মত করে কেটে সাজিয়ে রাখা আমড়া বিক্রি হতে দেখা যায়। আর সেই আমড়া দেখে জিভে জল আসেনা এমন মানুষ   খুঁজে পাওয়া যাবে না। গরমের সময় আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারের ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করতে আমড়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব উপকারের পাশাপাশি আমড়া আমাদের আরও কি কি উপকার করে চলুন তা জানা যাক। আমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে নীচে পড়তে থাকুন।

 

  • ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে: আমরা সকলেই জানি টক জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। তেমনি আমড়া একটি টক জাতীয় ফল, যাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। প্রতিদিন একটি করে আমড়া খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ভিটামিনের চাহিদা প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ পূরণ হবে। তাছাড়া আমড়াতে থাকা প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করে।
  • সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা করে: বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণের ফলে আমাদের অনেক সময় সর্দি এবং কাশি হয়ে থাকে। এ সকল সর্দি কাশি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকা অত্যন্ত জরুরি। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনি প্রাকৃতিকভাবে পেতে পারেন প্রতিদিন একটি করে আমড়া খাওয়ার মাধ্যমে।
  • বদহজমে সমস্যা থেকে রক্ষা করে: আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি পেটের বদহজমের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আমড়াতে থাকা ফাইবার পাকস্থলীর কার্যক্ষমতাকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, ফলে আমরা সহজেই বদহজম বা পেটে সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পারি।
  • ইনফ্লয়েঞ্জার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা: ভাইরাস আক্রমণের কারণে আমাদের শরীরে ইনফ্লয়েঞ্জা রোগের জীবাণু তৈরি হতে থাকে। এই ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শরীরে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকা অত্যন্ত জরুরী। তাই আপনি যদি দৈনিক একটি করে আমড়া খেতে পারেন তাহলে ইনফ্লয়েঞ্জা রোগ থেকে রক্ষা পাবেন।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে: আমড়াতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি আমাদের পাকস্থলীর বদহজম এবং পেট ফাঁপা কমাতে সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে বিশেষ করে বয়স্কদের কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাই তারা নিয়মিত একটি করে আমড়া খাওয়ার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
  • ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করেন: আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি না যে আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। আমড়াতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি আমাদের হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে। তাছাড়া শিশুদের দেহ গঠনেও ক্যালসিয়াম খুব উপকারী।
  • মুখে রুচি বৃদ্ধি করে: আমড়া টক জাতীয় ফল হওয়ায় এতে এমন কিছু ভেষজ গুণ রয়েছে যা আমাদের শ্বাসনালীর কফ নাশক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও এটি আমাদের মুখের রুচি বৃদ্ধি পায়।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে: আমড়া টক জাতীয় ফল হাওয়ায় এটিতে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি অল্প সময়ের মধ্যে ওজন কমাতে চান তাহলে নিয়মিত আমড়া খেতে পারেন। এতে করে কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ওজন কমে যাবে।
  • রক্তশূন্যতা দূর করে: আমড়াতে এক ধরনের আয়রনের উপস্থিতি রয়েছে যা আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আর আমরা জানি যে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ঠিক থাকলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত তৈরি হয়। তাই যাদের রক্তশূন্যতা রয়েছে তারা নিয়মিত আমড়া খাওয়ার চেষ্টা করুন এতে করে রক্তস্বল্পতা কমে যাবে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: আমড়াতে এক ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে, যা আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমড়া রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
  • ত্বক সুন্দর রাখে: আমড়া খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে। কারণ আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি রয়েছে। আমড়া আমাদের ত্বকের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো পড়ার মাধ্যমে আমরা আমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমড়াতে অধিক পরিমানে পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা থাকায় আমাদের উচিত নিয়মিত অল্প হলেও আমড়া খাওয়ার অভ্যাস করা। ছোট থেকে বড় সকল বয়সের মানুষের জন্য আমড়া বিশেষভাবে উপকার করে থাকে।

 

গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় একজন মহিলাকে খাদ্যের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতার সাথে থাকতে হয়। তেমনি অনেক কিছু খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হয়। কারণ গর্ভাবস্থার সময় ভুল খাবার গ্রহণ করার ফলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। গর্ভাবস্থায়  যেমন ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন তেমনি কিছু ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়।

সেজন্য অনেক গর্ভবতী মহিলার মনে প্রশ্ন জাগে যে, গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়া যাবে কিনা। এই প্রশ্নের উত্তরে বলব- অবশ্যই গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

 

  • গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমড়া হতে পারে একটি বিশেষ খাবার। তাই কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে গর্ভাবস্থায় অল্প পরিমাণের আমড়া খাওয়া উপকারী।
  • গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এই রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমড়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • আমড়াতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি হওয়ার ফলে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • আমড়া রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। তাই একজন গর্ভবতী মহিলা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে আমড়া খেতে পারে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্যে অরুচি হয়ে থাকে। এই অরুচি সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে আমড়া খাওয়া যেতে পারে। আমড়া খাওয়ার ফলে রুচি বৃদ্ধি পায়। বদহজমের সমস্যা  একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য নিত্যদিনের সমস্যা। তাই বদহজমের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত একটি হলেও আমড়া খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
  • গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভের সন্তানের শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে হিমোগ্লোবিন না থাকলে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য আমড়া খেতে পারেন।
  • আমড়াতে এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে বা রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য অত্যন্ত উপকারী।

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি গর্ভবতী মহিলারা সঠিক নিয়মে সঠিক খাবার খাবেন এবং নিজের স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ খেয়াল রাখবেন।

 

লেখকের শেষ কথা

আমড়ার উপকারিতা, আমড়ার পুষ্টিগুণ ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি আমড়ার উপকারিতা, আমড়ার পুষ্টিগুণ ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আপনার ইচ্ছা থাকে আপনার জ্ঞানভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করার তাহলে অবশ্যই বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে।

আশা করি আমাদের এই পোস্টটি থেকে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যবহুল পোস্ট যদি আপনি নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে। আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্টে অবশ্যই সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

আমড়ার গুণাগুণ সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন

 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমি শাহরিয়ার জামান (আবির) পেশায় একজন শিক্ষার্থী এবং জামান আইটি ২৪ এর CEO।

Leave a Comment