হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলে খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ, অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ, অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক। আমাদের ওবেসাইট ভিজিট করতে ক্লিক করুন
অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরম কিংবা রোদের মধ্যে কাজ করার ফলে আমাদের শরীর প্রচুর ঘেমে যায়। সাধারণত শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় বলে শরীর ঘেমে যায়। আমাদের শরীরে দুই ধরনের ঘাম গ্রন্থি রয়েছে, যথা অ্যাক্রিন ও অ্যাপোক্রিন। এই দুটি গ্রন্থি দিয়ে সাধারণত আমাদের শরীর থেকে ঘাম বের হয়। শরীর থেকে ঘাম বের হওয়া কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর, তবে শরীর অতিরিক্ত ঘামলে এটি বিশেষ কিছু রোগের কারণ হতে পারে। চলুন তাহলে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক।
- গ্রীষ্মকালের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও গরম থাকার কারণে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার কারনে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীর ঘামে।
- অতিরিক্ত পরিশ্রম করার কারণেও আমাদের শরীর ঘেমে যায়।
- হঠাৎ করে উত্তেজিত হওয়া, ভয় পাওয়া, রাগ করা কিংবা দুশ্চিন্তা করার কারণেও আমাদের শরীর ঘামতে পারে।
- আমাদের মধ্যে অনেককে আবার শীতকালেও হাত ও পা ঘামাতে দেখা যায়। এরকম সমস্যা হলে বুঝতে হবে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে কিংবা হরমোনজনিত সমস্যা রয়েছে।
- রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- দীর্ঘদিন যাবত নিউরোলজিক্যাল ঔষধ সেবন করার কারণেও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে ।
- এছাড়া যদি দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ঔষধ সেবন করা হয় তাহলেও শরীর ঘামতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি অতিরিক্ত ঘামের কারণগুলো কি কি। অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়, যার ফলে শরীরে একপ্রকার পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই যাদের শরীর অতিরিক্ত ঘাম হয় তারা প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। হরমোন বা থাইরয়েড সমস্যার কারণে যদি ঘাম হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিকার
গ্রীষ্মকালে কিংবা শীতকালেও যদি আপনার শরীর অতিরিক্ত মাত্রায় ঘামে তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় শরীর ঘামার কারণে শরীরে এক সময় পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা আমাদের জন্য একদমই কাম্য নয়। তাই এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনার করনীয় সম্পর্কে।
- অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- বেশি বেশি করে ফলের জুস, শরবত, স্যালাইন ও গ্লকোজ পান করতে হবে।
- গরমে কাজ করার ফলে যদি শরীর ঘামে তাহলে সরাসরি ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বাহিরে বের হওয়ার সময় সাথে করে অবশ্যই ঠান্ডা পানিতে স্যালাইন বা গ্লকোজ রাখতে হবে।
- আমরা যারা অতিরিক্ত চা বা কফি পান করে থাকি তাদের শরীরেও ঘাম হতে পারে। ভাই অতিরিক্ত মাত্রায় চা বা কফি পান করা হতে বিরত থাকতে হবে।
- তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তৈলাক্ত খাবার বেশি খাওয়ার কারণেও শরীরে ঘাম হতে পারে।
- শরীরের ঘাম নিয়ন্ত্রণে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বিশেষভাবে কাজ করে থাকে। তাই যাদের শরীর অতিরিক্ত ঘামে তারা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করতে পারেন।
- নিয়মিত টমেটোর জুস পান করলেও শরীরকে অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা করা যায়।
- ওজন বেশি হওয়ার কারণেও শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয়। তাই আমাদের সবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- বেকিং সোডা শরীরে ঘামের পরিমাণ কমাতে পারে। তাই এক গ্লাস পানির সঙ্গে এক চামচ বেকিং সোডা মেশিয়ে শরীরে বিভিন্ন স্থানে স্প্রে করা যেতে পারে।
- ধূমপান,অ্যালকোহল বা ক্যাফে জাতীয় খাবারের কারণে শরীর অতিরিক্ত ঘামে, তাই এ সকল খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণেও শরীরে ঘাম হয়। তাই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে।
- সব সময় সুতি বা সিল্কের তৈরি পোশাক পরার চেষ্টা করুন। এ সকল কাপড় শরীরের ঘাম শুষে নেয়, ফলে শরীর অতিরিক্ত ঘামাতে বাধা প্রদান করে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণে করনীয় সম্পর্কে। আশা করি উপরোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করলে আপনারা সহজে অতিরিক্ত ঘামা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।
অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে, অতিরিক্ত ঘামের কারণেও আমাদের বিশেষ কিছু রোগ হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয় তারা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত ঘাম কোন কোন রোগের লক্ষণ।
- ডায়াবেটিস: সাধারণত ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের শরীরে হঠাৎ করে প্রচুর ঘাম হয়ে থাকে। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ব্লাড সুগার কমে গেলে তাদের শরীররে অস্বাভাবিক অস্বস্তি তৈরি হয়। এই অস্বস্তির কারণে তাদের শরীরে প্রচুর ঘামের সৃষ্টি হয়।
- হৃদরোগ: হৃদরোগের কারণেও আপনার শরীরে প্রচুর ঘাম হতে পারে। বুক ধড়ফড় করা, বুকে ব্যথা হওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কিংবা বুকে চাপ অনুভব করার ফলে শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ ঘাম হতে পারে। তাছাড়া আপনার হার্টের স্বাভাবিক মাত্রার গতি কমে গেলে আপনার শরীরেও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- স্ট্রেস বা ভয়ের কারণে: আপনি যদি অতিরিক্ত মাত্রায় স্ট্রেস বা ভয় পেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে এক ধরনের হরমোন ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন ক্ষরণ হওয়ার ফলে আপনার শরীরে ঘামের সৃষ্টি হয়।
- ব্রেন স্টোক: যদি হঠাৎ আপনার মাথায় যন্ত্রণা কিংবা শরীরে প্যারালাইসিসের মতো অনুভূত হয় তখন আপনার শরীর অতিরিক্ত ঘেমে যেতে পারে। এরকম অনুভূত হলে অবশ্যই দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
- নিউরোলজিক্যাল: নিউরোলজিক্যাল হলো সাধারণত মাথায় টিউমার কিংবা খিচুনির মতো একটি সমস্যা। এরকম সমস্যার কারণে শরীরে প্রচুর পরিমাণ ঘাম দেখা দেয়। এমন উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়া আরও অনেক রোগ রয়েছে, যে সকল রোগের কারণে শরীরে প্রচুর পরিমাণে ঘামের সৃষ্টি হয়। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি টিউমার, মেনোপজ নারী, রক্তে ইনফেকশন, ম্যালেরিয়া, হাইপারহাইড্রোসিস ইত্যাদি রোগের কারণে শরীরে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দেখা যায়। তাই অতিরিক্ত ঘাম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আশা করি উপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন অতিরিক্ত ঘাম কোন কোন রোগের লক্ষণ।
অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়
অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনি কিছু ঘরোয়া ট্রিপস অবলম্বন করতে পারেন। ঘরোয়া ট্রিপসগুলো মেনে চললে আপনি সহজে শরীরের ঘাম থেকে রক্ষা পেতে পারেন। আপনি সে সকল উপাদানগুলো আপনার ঘরে সহজেই পেয়ে যাবেন, যেগুলো ব্যবহার করে সহজে অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তা হয়তো আপনারা কখনো চিন্তাও করেননি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
- স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে: অতিরিক্ত ঘাম হলে আপনি যদি নিয়মিত দৈনিক একটি করে স্যালাইন খান তাহলে আপনার শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ঘামা থেকে রক্ষা পেতে পাবেন।
- গ্লকোজ খাওয়ার মাধ্যমে: আমরা সাধারণত শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করার জন্যই গ্লকোজ পান করে থাকি। তাই আপনি নিয়মিত গ্লকোজ খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা পেতে পাবেন।
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার মাধ্যমে: আমাদের সকলেরই পরিচিত একটি উপাদান হল আপেল সিডার ভিনেগার। যা আমরা সহজেই বাসায় তৈরি করতে পারি অথবা বাজার থেকে কিনে নিতে পারি। এটি আপনার শরীরের পিএইচ মাত্রা স্বাভাবিক রাখবে, ফলে শরীর অতিরিক্ত ঘামা হতে রক্ষা পাবে।
- ভিনেগার ব্যবহার করে: ভিনেগার আমাদের সকলের বাসায় থাকে। তাই আপনি যদি এই উপাদানটি নিয়মিত ব্যবহার করেন তাহলে সহজেই অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এক চামচ ভিনেগার অল্প পানিতে ভালোভাবে মিশ্রণ করে এতে পছন্দনীয় কোন সুগন্ধি ব্যবহার করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্প্রে করুন। এটি আপনার শরীরে ঘাম নিয়ন্ত্রণ করতে খুব উপকার করবে।
ভিনেগার সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন
উপরোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করে আপনি সহজে নিজেকে অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা করতে পারেন। আমাদের সকলেরই ঘাম হয়ে থাকে, তবে এটি যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তাহলে অবশ্যই এটি চিন্তার বিষয়। তাই ঘরে বসে স্বাভাবিকভাবে না নিয়ে আপনার শরীরে যদি অতিরিক্ত ঘাম হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আশা করি অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন।
কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর ঘামে
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে ভিটামিনের অভাবেও আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে? আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হলে অতিরিক্ত ঘাম হয়। তাই আমাদের সকলকে নিয়মিত ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে যাদের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয় তারা নিয়মিত ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর ঘামে এই প্রশ্নের উত্তরে বলব ভিটামিন-ডি এর অভাবে শরীর ঘামে।
লেখকের শেষ কথা
অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ, অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ, অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আপনার ইচ্ছা থাকে আপনার জ্ঞানভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করার তাহলে অবশ্যই বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে।
আশা করি আমাদের এই পোস্টটি থেকে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যবহুল পোস্ট যদি আপনি নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে। আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্টে অবশ্যই সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন।