তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত হাদিস থেকে বিস্তারিত জানুন

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলে খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক। আমাদের ওবেসাইট ভিজিট করতে ক্লিক করুন

 ভূমিকা: তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদের নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ন নফল ইবাদত। এই নামাজ মধ্যরাতের শেষের দিকে এবং সুবহে সাদিকের পূর্বে মুহূর্ত পর্যন্ত পড়া সবচেয়ে উত্তম। আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য অর্জন করা সবচেয়ে সহজ একটি মাধ্যম হলো তাহাজ্জুতের নামাজ । তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তার বান্দার  উপর খুব খুশি হন।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুতের নামাজের আরেকটি নাম হলো কিয়ামুল লাইল। কিয়াম শব্দের অর্থ সাড়া দেওয়া আর লাইল অর্থ হলো রাত। তাহলে কিয়ামুল লাইল এর পারিভাষিক অর্থ হলো রাতে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়া। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বিশ্বের সকল মুসলমান জাতিকে তাহাজ্জুদের নামাজকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে আহবান করেছেন।

 

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। তাহাজ্জুদের নামাজ আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয় একটি ইবাদত। এই নামাজ একজন মুসলিমের ঈমান মজবুত করে। আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের সর্বোৎকৃষ্ট ইবাদত হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। এছাড়াও আমরা আমাদের পাপ থেকে মুক্তি পেতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে থাকি। নিম্নে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের আলোকে বর্ণনা করা হলো:

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- মহান আল্লাহ তা’আলা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আসমানে চলে আসেন এবং বলেন, তোমরা কে আছো যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। তোমরা কে আছো যে আমার কাছে চাইবে আমি তার আশা পূর্ণ করবো। তোমরা কে আছো, যে আামার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তোকে ক্ষমা করে দিব। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-১১৪৫)

হয়রত আবু মালিক আল আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- জান্নাতে কিছৃ ঘর রয়েছে, যার ভিতরে থেকে বাহিরে এবং বাহির থেকে ভিতরে দেখা যাবে। যেখানে রয়েছে অনাবিল সুখ আর শান্তি। আল্লাহ তা‘আলা এই ঘরগুলো তৈরী করেছেন তাদের জন্য, যারা তাদের জিহ্বাকে হিফাজত করে, গরীবদের সহায়তা করে, নিয়মিত রোজা রাখে এবং অন্যরা যখন ঘুমায় তখন সে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে। (সহীহ তিরমিজি, হাদিস নং- ১৯৮৪)

হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত- হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন- তোমরা রাতের শেষ ভাগে বেশি বেশি নামাজ আদায় করো। কেবলমাত্র এই নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহ তা‘আলার করুনা এবং সকল জানা অজানা পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া সকল ধরণের গুনাহ করা থেকে  বিরত থাকার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। (সহীহ তিরমিজি, হাদিস নং-৩৫৪৯)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- হে ইমানদারগণ, তোমরা বেশি বেশি সালামের প্রচলন করো, ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার দাও, আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখো এবং তোমার অন্য ভাইয়েরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন বেশি বেশি করে নামাজ আদায় করো। যার বিনিময়ে তুমি পাবে জান্নাতের অনাবিল সুখ। (সহীহ তিরমিজি, হাদিস নং-২৪৮৫)

 

তাহাজ্জুদ নামাজের ঘটনা

ইসলামে তাহাজ্জুদ নামাজের প্রচলন রয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত রয়েছে বলেই সকল ধর্মপ্রান মুসলমান আল্লাহকে খুশি করতে এবং তার নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে রাতের মধ্য ভাগের শেষের দিকে এই নামাজ পড়ে থাকেন। নিম্নে তাহাজ্জুদ নামাজের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময় থেকেই তাহাজ্জুদ নামাজের প্রচলন শুরু হয়। আল্লাহ তা‘আলা এই নামাজের জন্য আমাদের প্রিয় নবীকে নির্দেশ দেন। সুর আল-মুজাম্মিল এর প্রথম আয়াতে উল্লেখ রয়েছে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) রাতে যখন চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন, আল্লাহ তা‘আলা এই রাত সম্পর্কে বলেন- হে আমার নবী আপনি চাদর ছেড়ে ঘুম থেকে উঠুন এবং নামাজ কায়েম করুন। (সুরা আল-মুজাম্মিল আয়াত নং-১)

এখানে আরো বলা হয়েছে নামাজ কায়েম করার পাশাপাশি শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে। আল্লাহ তা‘আলার এই নির্দেশনায় সে সময় হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর ওপর এই নামাজ ওয়াজিব হয়েছিলো। উপরে কোরআনের আলোচনা হতে আমরা বুঝতে পারি তাহাজ্জুদের নামাজ আসলে আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ন এবং ফজিলতের। এই নামাজের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর দয়া কামনা করি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি।

আমাদের প্রিয় নবীও তাহাজ্জুদের নামাজে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন এবং তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। হযরত আয়েশা রোঃ) হতে বর্ণিত-

রাসূল (সাঃ) রাতের নামাজ এতই লম্বা করতেন যে, দাড়িয়ে থাকার কারণে উনার পা ফুলে যেত। আয়েশা (রাঃ) বললেন- হে আল্লাহর রাসূল আপনি কেনো এত কষ্ট করেন। যেখানে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আপনি তার সবচেয়ে প্রিয় নবী ও রাসূল। তখন রাসূল (সাঃ) বলেন, হে আামর বিবি, আমি কি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারিনা? (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৪৮৩৭)

 

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া কবুল হয়

তাহাজ্জুদের নামাজ এমন একটি নামাজ যেসময় আল্লাহ তা‘আলা সপ্তম আসমান হতে প্রথম আসমানে চলে আসেন এবং বান্দাদের বলেন, হে বান্দা তোমরা আমার কাছে চাও। আমি তোমাদের আশাগুলো পূরণ করবো। তাহাজ্জুদের নামাজে বান্দা কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না।

যারা সালাত আদায় করে এবং শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে আল্লাহ এবং তার রাসূলের কাছে সেই ব্যক্তি অনেক প্রিয়। রাতের মধ্যভাগের শেষের দিকে অধিকাংশ মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, তখন আল্লাহর প্রিয় বান্দারা তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্যে সময় কাটান। এসময় আল্লাহর প্রিয় বান্দারা আল্লাহর কাছে যা চেয়ে থাকেন, আল্লাহপাক তা পূরণ করেন।

হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- পুরো রাতের মধ্যে বিশেষ কিছু সময় রয়েছে, যেসময় কোন মুসলমান বান্দা যদি আল্লাহর কাছে কোন কিছু চায় বা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার দোয়া এবং চাওয়াগুলোর পূর্নতা দান করেন। সেই সময়টি হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশে বা তাহাজ্জুদ নামাজের সময়। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৭৫৭)

তাহাজ্জুদের নামাজ হলো বিশেষ এক ধরনের নফল ইবাদত। যেই নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহকে খুশি করা যায় এবং এই নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমাদের দোয়া কবুল হওয়ার  সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সবকিছু নিরিবিলি থাকে, তাই দোয়া মন থেকে চলে আসে। আর আল্লাহ তা‘আলা এই ধরনের দোয়া কবুল করে থাকেন।

হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন- আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশে। (সহীহ তিরমিযি)

 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম:

এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায়। তবে মধ্য রাতের শেষ ভাগে এই নামাজ কায়েম করা সবচেয়ে উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজের আলাদা কোন নিয়ম-কানুন নেই। অন্যান্য নফল নামাজের মত পড়তে হয়। শুধু নিয়তের সময় পরিবর্তন আনতে হয়।

  • যদি ঘুমিয়ে যান তাহলে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরে মেসওয়াক করাসহ অজু করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
  • তারপর জায়নামাজ বিছিয়ে, জায়নামাজে দাড়িয়ে জায়নামাজের দোয়া পড়তে হবে।
  • এরপর দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে। (নিচে আরবী নিয়ত বাংলা অর্থসহ দেওয়া আছে)
  • তারপর অন্যান্য নামাজের মত ছানা পড়তে হবে।
  • তারপর প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার সাথে অন্য যেকোন একটি সুরা পড়তে হবে। ‍দ্বিতীয় রাকাতেও একই নিয়মে সুরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সুরা পড়তে হবে। ( তাহাজ্জুদ নামাজে সুরা কাউসার পড়া উত্তম)।
  • রুকু, সিজদা অন্যান্য নামাজের মতই আদায় করতে হবে।
  • দুই রাকাত পর পর বৈঠকে তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে ডান দিকে একবার এবং বাম ‍দিকে একবার সালাম ফেরাতে হবে।

নামাজ শেষ করে দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করতে হবে। কারণ আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে, তাহাজ্জুদের নামাজে দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হয়ে। তাহাজ্জুদ নামাজে রাকাতের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি যত রাকাত ইচ্ছা পড়তে পারেন। এটি একান্তই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত।

 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে-

নাওয়াইতুয়ান উছওয়াল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাতাই ছালাতিল তাহাজ্জুদী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

 

বাংলা অর্থ – আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কেবলামুখী হয়ে তাহাজ্জুদের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ এর নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবার।

 

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার আগে এই নিয়ত মনে মনে পড়লেই হয়ে যায়। আপনি যদি মন থেকে নিয়ত করে থাকেন তাহলে মুখে উচ্চরণ করে পড়তে হয় না। অনেকেই এই নিয়ত মুখে উচ্চরণ করে পড়ে থাকেন। তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ত করার সময় আমাদের সকল মনোযোগ আল্লাহর দিকে হওয়া উচিত এবং আন্তরিকতার সাথে নামাজ আদায় করা উচিত।

 

লেখকের শেষ কথা

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আপনার ইচ্ছা থাকে আপনার জ্ঞানভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করার তাহলে অবশ্যই বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে।

আশা করি আমাদের এই পোস্টটি থেকে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যবহুল পোস্ট যদি আপনি নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে। আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্টে অবশ্যই সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন। 

নফল ইবাদত সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন 

 

 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমি শাহরিয়ার জামান (আবির) পেশায় একজন শিক্ষার্থী এবং জামান আইটি ২৪ এর CEO।

2 thoughts on “তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত হাদিস থেকে বিস্তারিত জানুন”

Leave a Comment