হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলে খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক। আমাদের ওবেসাইট ভিজিট করতে ক্লিক করুন
ভূমিকা। সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। সিদ্ধ ডিম খেলে কি গ্যাস হয়
মানব দেহে পুষ্টির চাহিদা মিটাতে ডিমের জুড়ি নেই। ডিম সিদ্ধ করে খেলে সবচেয়ে বেশী পুষ্টি পাওয়া যায়। কেননা সিদ্ধ ডিমে ক্যালরির পরিমাণ বেশ কম থাকে। তবে এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, প্রোটিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন থাকে; যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও দ্রুত ওজন কমাতে ডিম সিদ্ধ অনেক সাহায্য করে।
ডিমের পুষ্টিগুণ
একটি ডিমে পুষ্টির পরিমাণ নিম্নরূপঃ
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
এনার্জি | ১৪৩ ক্যালোরি |
প্রোটিন | ১২.৫৬ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ০.৭২ গ্রাম |
ফ্যাট | ৯.৫১ গ্রাম |
ফসফরাস | ১৯৮ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১৩৮ মিলিগ্রাম |
জিংক | ১.২৯ মিলিগ্রাম |
ডিম সিদ্ধ খাওয়ার উপকারিতা।
ডিমে থাকে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, যা শরীর খুব সহজে গ্রহণ করে। তাই নিয়মিত সিদ্ধ ডিম খেলে দেহে ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি অনেকটা মিটিয়ে ফেলা যায়। ডিম সিদ্ধ আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে। চলুন এবার জেনে নেই সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেঃ
- সিদ্ধ ডিম খেলে শরীরে খুব তাড়াতাড়ি এনার্জি আসে। ডিমে থাকা ভিটামিন শরীরে শক্তি যোগায়। তাই প্রতিদিন সকালে একটি করে সিদ্ধ ডিম খেলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হবে।
- সিদ্ধ ডিমের কুসুম উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- সিদ্ধ ডিম শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়তা করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- সিদ্ধ ডিম খেলে এর নানারকম পুষ্টি উপাদান শরীরে যায়। ডিম পোচ বা ভেজে খাওয়ার চেয়ে সিদ্ধ করে খেলে আমাদের বেশি উপকার হয়।
- শিশুদের দাঁত ও হাড় শক্ত করতে নিয়মিত সিদ্ধ ডিম খাওয়ানো উচিত। আবার গর্ভবতী মহিলারা সিদ্ধ ডিম খেলে তাদের গর্ভের সন্তানের অনেক উপকার হয়।
- সিদ্ধ ডিমে লুটেইন ও ক্যারোটিনয়েড নামক দুটি উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলো থাকার কারণে নিয়মিত সিদ্ধ ডিম খেলে ম্যাকুলার ক্ষয় কম হয়। সিদ্ধ ডিমে ভিটামিন এ থাকার জন্য এটি চোখের জন্য বেশ উপকারী।
- সিদ্ধ ডিম স্নায়ু ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে। এটা মস্তিষ্কের মেমব্রেন ও পেশী সংগঠিত রাখতে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের ঝিল্লী গঠনে সহায়তা করে এবং স্নায়ু থেকে পেশীতে সংবেদন পৌঁছাতেও সহায়তা করে।
- ডিমে থাকে উচ্চমাত্রার সালফার, যা ভিটামিন ডি এর বড় একটি উৎস। এটা চুল ও নখ ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- ডিমে থাকে ভিটামিন ই, যা কোষ আর ত্বকে থাকা ফ্রি রেডিকেল ধ্বংস করে। যার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। এছাড়া নতুন কোষ তৈরিতেও সাহায্য করে এবং নিয়মিত ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়।
- যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের প্রতিদিন সিদ্ধ ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। সিদ্ধ ডিম খেলে পেশীর ব্যথা কমে। সিদ্ধ ডিমে থাকা ভিটামিন ডি পেশী মজবুত করতে সাহায্য করে।
- সিদ্ধ ডিম খেলে হার্টে রক্ত জমাট বাঁধে না, তাই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কম থাকে এবং শরীরে রক্ত চলাচল সচ্ল রাখতে সহায়তা করে।
- ডিম শরীরের লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত ডিম খেলে লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
- ডিমে থাকা আয়রন শরীরের রক্তস্বল্পতা সমস্যার সমাধান করে।
- ডিমে থাকা জিংক শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে অনেকটা শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও ডিম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ঘন-ঘন সর্দি জ্বর হতে রক্ষা পেতে নিয়মিত ডিম খেতে পারেন।
- সিদ্ধ ডিমে প্রাকৃতিকভাবে অনেক পরিমাণে প্রোটিন থাকে। আমাদের শরীরে মাংসপেশি গঠনের জন্য প্রোটিন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রোটিন শরীরের সব কোষ গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া চুলের জন্যও এটি খুব প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রতিদিন একটি সিদ্ধ ডিম খেলে ৬ গ্রামেরও বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়।
সিদ্ধ ডিম খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটা জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ উভয় দিকই থাকে। সিদ্ধ ডিম যেমন আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী একটি উপাদান তেমনি এটি বেশি পরিমাণে খেলে অনেক ক্ষতিও হতে পারে। দিনে সর্বোচ্চ তিনটে সিদ্ধ ডিম খাওয়া যেতে পারে। এতে কোন সমস্যা হবে না। তবে তিনটির বেশি সিদ্ধ ডিম খাওয়া মোটেও ঠিক নয়।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের বেশি সিদ্ধ ডিম খাওয়া উচিত নয়। তাদের সিদ্ধ ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। এছাড়াও যাদের ইউরিক এসিড বেশি, তাদেরও ডিম খাওয়া হতে বিরত থাকা উচিত। তবে সিদ্ধ ডিম স্বাভাবিক মানুষের জন্য খুব উপকারী। তাই এটা নিয়মিত খেতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সকালে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিম আমাদের প্রায় সকলের প্রিয় একটি খাদ্য। এই ডিমের আছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোটিন এবং কুসুমে থাকে ভালো ফ্যাট, আয়রন ও ভিটামিন। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় শক্ত ও মেধার বিকাশের জন্য ডিম খুবই কার্যকরী। এছাড়াও ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে, আর কুসুমে থাকা ভিটামিন ডি হাড়ের জন্য বেশ উপকারী। চলুন জেনে নেওয়া যাক সকালে ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেঃ
- ওজন কমাতে- ডিম উচ্চ প্রোটিন সমৃ্দ্ধ একটি খাবার। তাই সিদ্ধ ডিম খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে, ফলে বারবার খাওয়ার চাহিদা থাকে না। এতে করে ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও কমে। তাই বলা যায় যে, ডিম খেলে ওজন কমে।
- দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে- শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ এর ভালো একটি উৎস হলো ডিম। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করতে সহায়তা করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়- সকালে নিয়মিত সিদ্ধ ডিম খেলে শরীরে উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বেড়ে যায়, যেটা ভালো কোলেস্টেরল নামেও পরিচিত। যাদের রক্তে HDL এর মাত্রা বেশি তাদের হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায়।
- কাজের শক্তি বাড়ায়- ডিম শরীরের প্রয়োজনীয় এনার্জির একটা উৎস। ডিমে থাকা ভিটামিন থেকে শরীরে শক্তি পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন সকালে একটি সিদ্ধ ডিম খেলে সারাদিন শরীর এনার্জিটিক থাকবে।
রাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
অনেকের ধারণা রাতে ডিম খেলে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে, রাতে ডিম খেলে আমাদের কতটা উপকার হয়। ডিম আমাদের প্রায় সকলেই খুব প্রিয় একটি খাবার। আর এটা যদি ডিনারে খাওয়া যায় তাহলে রাতে ভালো ঘুম হয়। কেননা ডিমে রয়েছে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি উপাদান, যা আমাদের চাপ কমায় এবং ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে। ডিম হাড় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোর কার্যকারিতা উন্নত করে। সেজন্য রাতে ডিম খেলে শরীরে ভালো কোলেস্টেরল জমা হয় এবং সকালে সূর্যের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে শরীর তা থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করতে আরম্ভ করে। রাতে ডিম খেলে ওজন কমতেও সহায়তা করে।
সিদ্ধ ডিম খেলে কি গ্যাস হয়
আপনার অনেকে জানতে চেয়েছেন যে, সিদ্ধ ডিম খেলে কি গ্যাস হয় সে সম্পর্কে। আসলে ডিম হচ্ছে অল্প দামে পুষ্টিকর একটি খাবার। তবে এই প্রাণিজ খাবারটি প্রোটিন এর ভালো একটি উৎস। আর ডিমের এই প্রোটিনকে শরীর সহজেই গ্রহণ করে নেয়। এছাড়াও ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৫, ফসফরাস, সেলোনিয়ামের মত একাধিক উপকারী ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। এত উপকারী এই খাবারের সাথে গ্যাস হওয়ার কোন সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু যাদের ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিস এর সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য প্রতিদিন ডিম খেলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দিনে কয়টা ডিম খাওয়া ভালো
যে কোন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে তার কোন সমস্যা হবে না। ডায়াবেটিস, প্রেসার, কোলেস্টেরলের রোগীরাও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিনে একটি করে সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন। তবে যাদের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, ইউরিক অ্যাসিড ও হার্ট ডিজিজ রয়েছে তাদের ডিম কম খাওয়াই ভালো।
লেখকের শেষ কথা |
সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আপনার ইচ্ছা থাকে আপনার জ্ঞানভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করার তাহলে অবশ্যই বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে।
আশা করি আমাদের এই পোস্টটি থেকে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যবহুল পোস্ট যদি আপনি নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে। আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্টে অবশ্যই সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
সিদ্ধ ডিম সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন