হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলে খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় ও ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় ও ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক। আমাদের ওবেসাইট ভিজিট করতে ক্লিক করুন
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
বর্তমানে অনেকেই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই অনেকে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে চান। আজকের পোস্টে আমি মূলত ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো। ফ্যাটি লিভার বলতে আমরা যকৃতে চর্বি জমা হওয়াকে বুঝি। আমাদের লিভারে সামান্য পরিমাণে চর্বি থাকবে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু লিভারে যদি অতিরিক্ত চর্বি জমে তাহলে এটি অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর।
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানার আগে আপনাদের জানতে হবে ফ্যাটি লিভারের ধরণ সম্পর্কে। ফ্যাটি লিভার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, যথাঃ
- অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।
- নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।
অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বলতে বুঝায়, যারা অ্যালকোহল পান করার ফলে লিভারে ফ্যাট জমা হয়ে থাকে।
সাধারণত আমাদের লাইফ স্টাইল এর পরিবর্তনের কারণে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে, যেমন- ক্ষতিকর খাদ্যাভাস, অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট, প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার, অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া, তরকারিতে অতিরিক্ত মসলা খাওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ খাওয়ার ফলে ফ্যাট লিভার হয়ে থাকে এবং যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে তাদের ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ফ্যাটি লিভার যে কোন বয়সে মানুষেরই হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় কারো বংশগত বা বয়সের কারণে ফ্যাট লিভার আক্রান্ত হয়।
গবেষণায় দেখা যায় যে, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে খুব কম মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে এবং নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। অনেক সময় আমারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হলে তা কোনভাবে বুঝতে পারি না। কিন্তু ফ্যাটি লিভারের কারণে অনেক সময় বড় ধরনের রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
কিছু খাদ্যাভাস মেনে চলার মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার কমানো সম্ভব। নিচে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
- যেসব ব্যক্তির অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রয়েছে তারা অ্যালকোহল জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকবেন এবং চিরতরে ফ্যাটি লিভার হতে মুক্তি পেতে চাইলে অ্যালকোহল পান হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
- দুধ চা বা দুধ দিয়ে তৈরি কফি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত ঘন করে দুধ পান করা যাবে না।
- আপনার ফ্যাটি লিভার সহজে দূর করতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার এবং ভিটামিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে।
- আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ফাইবার যুক্ত খাবার রাখতে হবে। কারণ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার ফলে অনেক সময় ধরে ক্ষুধা লাগে না। আর ক্ষুধা না লাগার কারণে কম খেতে হবে এবং লিভারে ফ্যাট কম জমবে।
- খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন নানা ধরনের শাকসবজি রাখতে হবে, যেমন- বরবটি, শিম, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, ব্রকলি ইত্যাদি। এছাড়াও প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় কমপক্ষে এক ধরণের শাক রাখতে হবে।
- আমাদের অনেকেরইে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, ফ্যাটি লিভার হলে প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলেন, আপনার প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই উন্নতমানের কিছু প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। তবে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে। তবে চর্বি ছাড়া গরুর মাংস মাঝে মধ্যে খেতে পারেন। এছাড়াও মুরগির চামড়া খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
- প্রতিদিন একটি করে সিদ্ধ ডিম এবং টক দই খেতে পারেন। টক দই ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমলে আপনার ফ্যাটি লিভার কমে যাবে।
- প্রতিদিন খাবার রান্নার কাজে তেল কম ব্যবহার করতে হবে। অধিক মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয়
মানুষের পেটে যখন অতিরিক্ত চর্বি জমে তখন সে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হয়। ফ্যাটি লিভারের কারণে অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। পেটে যখন অতিরিক্ত চর্বি জমে তখন লিভারেও কিছুটা চর্বি জমে। যার ফলে লিভার কম কাজ করে। অনেক সময় আমরা বুঝতে পারিনা যে আমাদের লিভারে ফ্যাট জমেছে কিনা। ফ্যাটি লিভার হলে কি জাতীয় সমস্যা হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- ফ্যাটি লিভার হলে প্রথমত পেটের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়, অর্থাৎ ভুড়ি অনেকটা বড় দেখায়। যার ফলে আপনার কাজ করতে নানাবিধ অসুবিধা হয়।
- লিভারে যখন চর্বি জমা হয় তখন লিভারের কার্যক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়। যার ফলে আপনার ক্ষুধা মন্দা শুরু হয়, অর্থাৎ খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাবে, বমি বমি ভাব আসবে এবং খুব দুর্বল লাগবে। শরীরে অলসতা কাজ করবে।
- ফ্যাটি লিভারের কারণে অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন- প্রচন্ড মন খারাপ, অতিরিক্ত মাথায় ব্যথা এবং বিষণ্ণতা। এসব লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হয়েছেন।
- যদি দেখেন আপনার চোখ হলদে হয়ে যাচ্ছে তাহলে এটি ফ্যাটি লিভারের উপসর্গ মনে করবেন।
- ফ্যাটি লিভার হলে আপনার হজমের সমস্যা সৃষ্টি হবে এবং খাবার হজম হতে চাইবে না।
- অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি দেখা দিতে পারে।
- খাবার সময় বমি বমি ভাব হবে।
- হঠাৎ করে পেট ফুলে যেতে পারে।
- হঠাৎ করেই আপনার ওজন কমে যেতে পারে।
ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত
যারা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত তারা চিন্তা করেন কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে। একটু সচেতন হয়ে খাবার গ্রহণ করলে আমাদের লিভারে ফ্যাট কমে আসবে। ফ্যাটি লিভার প্রথম পর্যায়ে থাকলে চিকিৎসকরা এর জন্য কোন ঔষধ দেন না, প্রথমে তারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা বলেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে বড় কাজ হলো পরিমিত খাবার খাওয়া । আপনি প্রতিদিন কি ধরনের খাবার খাচ্ছেন এবং কোন ধরনের খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
ফ্যাটি লিভার আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নিচের খাবারগুলো খাওয়া উচিত। নিচের খাবারগুলোর মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
শাকসবজিঃ গবেষকরা বলেন, সবুজ শাক-সবজির মধ্যে পাওয়া যায় যথেষ্ট পরিমাণে নাইট্রেট অ্যাসিড ও পলিফেনাল, যার ফলে এটি লিভারের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে।
কিন্তু আমারা অনেকেই শাক রান্না করার সময় সিদ্ধ করে পানি ফেলে দেই। কিন্তু এ পানি ফেলে দেওয়া উচিত নয়, কারণ এ পানি ফেলে দিলে এর সাথে পলিফেনাল চলে যায়, ফলে এটি আমাদের শরীরের জন্য খুব একটা বেশি কার্যকর হয় না।
ডাল জাতীয় খাবারঃ যে খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আশ রয়েছে সে খাবারগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। যেমন- ডাল, মটরশুটি, ছোলা, সয়াবিন ইত্যাদি। এই খাবারগুলো আমাদের শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
বীজঃ বীজ জাতীয় খাবার ফ্যাট লিভার কমানোর জন্য খুব বেশি উপকারী। যেমন- সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী বীজে থাকা ভিটামিন-ই আমাদের ফ্যাট কমানোর জন্য অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে।
সামুদ্রিক মাছঃ ওমেগা ৩ তেল যুক্ত যেসব সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। এগুলো আমাদের ফ্যাটি লিভারের জন্য খুব উপকারী। যেমন- টুনা, রূপচাঁদা, শ্যামন, ইলিশ ইত্যাদি। চিকিৎসকদের মতে, সপ্তাহে কমপক্ষে দুই থেকে তিন দিন মাছ খাওয়া উচিত।
ওটসঃ আপনার ফ্যাটি লিভার কমানোর জন্য আপনি প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় লাল আটার রুটি এবং ওটমিল রাখবেন। জটিল শর্করাযুক্ত খাবার ফ্যাট লিভার কমাতে খুব কাজ করে।
বাদামঃ আপনার খাদ্য তালিকা প্রতিদিন নানা ধরনের বাদাম রাখতে পারেন। বাদাম আপনার মানসিক ট্রেস কমাতে সহায়তা করে এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
রসুনঃ কাঁচা হলুদ এবং কাঁচা রসুন যকৃতের চর্বি কমাতে সহায়তা করে।
ফ্যাটি লিভারের ব্যায়াম
যেসব ব্যক্তিদের শারীরিক পরিশ্রম অনেক কম হয় এবং যাদের শারীরিক ব্যায়াম করা হয় না তাদের ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই ফ্যাটি লিভার আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। সকালে অথবা বিকালে সুবিধা অনুযায়ী কাজের ফাঁকে আপনাকে শারীরিক ব্যায়াম করার অভ্যাসটি করে তুলতে হবে।
একদিনে অতিরিক্ত ব্যায়াম করা যাবে না, অতিরিক্ত ব্যায়াম আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ফ্যাটি লিভারের ব্যায়াম করার আগে আপনাকে অবশ্যই হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ব্যায়াম করার জন্য আপনি প্রথমে একটি পরিকল্পনা করুন। যেমন- প্রথম এক মাস আপনি শুধু হাঁটা চলাফেরা করবেন এবং এটিকে পরবর্তীতে আস্তে আস্তে ব্যায়ামে পরিণত করবেন।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং আস্তে আস্তে সেটিকে আপনি পরবর্তীতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টাতে পরিণত করবেন। হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুললে দেখবেন আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি কমে যাচ্ছে।
ফ্যাটি লিভারের জন্য অন্য একটি ব্যায়াম আছে সেটিকে যোগব্যায়াম বলা হয়। যোগব্যায়াম করা হয় সাধারণত সকাল বেলায়। কিন্তু আপনাকে এই ব্যায়াম করার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে এবং এটিকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। আপনার অভ্যাসের ফলে এটি আপনার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
ফ্যাটি লিভার কি ভালো হয়
আমাদের লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে তখন সেটি ফ্যাটি লিভার ধারণ করে। ফ্যাটি লিভার হয় মূলত ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং অনিয়মিত খাদ্যাভাস গড়ে তোলার ফলে। ফ্যাটি লিভার যদি প্রথম পর্যায়ে থাকে তাহলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে এটি ভালো হয়ে যাবে।
আমরা উপরে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার ফ্যাটি লিভার দূর হয়ে যাবে।
লেখকের শেষ কথা | ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় ও ব্যায়াম
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় ও ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় ও ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আপনার ইচ্ছা থাকে আপনার জ্ঞানভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করার তাহলে অবশ্যই বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে।
আশা করি আমাদের এই পোস্টটি থেকে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যবহুল পোস্ট যদি আপনি নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে। আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্টে অবশ্যই সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন