হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলে খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই যেসকল রোগের উপকার করে আমলকী এ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে যেসকল রোগের উপকার করে আমলকী এ সম্পর্কে বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক।
যেসকল রোগের উপকার করে আমলকী
নানা গুণে ভরপুর, সকল রোগের ওষুধ আমলকী
স্বাস্থ্যের জন্য অতি উপকারী একটি ফল আমলকী। নানা গুণে ভরপুর এই ফলটি তাই নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকগণ। ভেষজগুণসম্পন্ন আমলকীতে রয়েছে নানা জাদুকরী উপাদান। ভেষজগুণসম্পন্ন আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আমলকী ফল ও পাতা দুটোই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। খাওয়ার রুচি বাড়াতে আমলকী বিশেষভাবে কার্যকরী। টক জাতীয় এ ফল এত পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ উপাদানে ভরপুর যে একটিমাত্র আমলকী খেলে ভিটামিন সি এর জন্য আপনাকে অন্য আর কোনো ফল খাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
পুষ্টিবিদদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকীতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

নিয়মিত আমলকী খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। একে একে তা জেনে নিই–
১. দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমলকী। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এর উপাদান সাধারণ জ্বর এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ রোধে সহায়ক।
২. বতর্মান সময়ে অ্যাসিডিটির সমস্যা কমবেশি সবারই আছে। পেটে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমলকীর জুস কার্যকরী।
৩. ক্লান্তি, অলসতা, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, মেজাজ বিগড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যায় আমলকী দারুণ কাজ করে।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ্বরোগেও দারুণ কার্যকরী আমলকী। আমলকীতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে সহজে।
৫. গর্ভাবস্থায় হাত ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া খুবই সাধারণ লক্ষণ। আমলকীতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান এ সমস্যার সমাধানে কাজ করে। পাশাপাশি আমলকীতে থাকা প্রচুর পরিমাণে জলীয় উপাদান থাকায় এ ফল শরীরকে হাইড্রেট রাখতেও সাহায্য করে।
৬. নিয়মিত আমলকী খাওয়ার অভ্যাস রক্তচাপ ঠিক রাখে। আমলকীতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ রক্তনালি প্রসারিত করতেও সাহায্য করে, যা স্বাভাবিক রক্তচাপ ধরে রাখে এবং রক্তচাপ বাড়তে দেয় না।
৭. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আমলকী প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। তাই শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন থেকে মুক্তি পেতেও নিয়মিত খান আমলকী।
৮. মাড়ি থেকে রক্ত বের হওয়া কিংবা নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি দিতে পারে আমলকী। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ আমলকী দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধেও দারুণ কার্যকরী আমলকী।
৯. আমলকীতে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
১০. স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও দারুণ কার্যকরী আমলকী। হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ভালো রাখার পাশাপাশি আমলকী দীর্ঘমেয়াদি সর্দি-কাশি দূর করতেও দারুণ কাজ করে।
বর্তমান সময়ে সুপার ফুড বলে একটা কথা চালু হয়েছে। যে ফল বা খাবারের গুণাগুণ সাধারণ ফলের তুলনায় অনেক বেশি, সেসব ফলেরই এমন তকমা মেলে। আমলকীর গুণাগুণের কথা বিবেচনা করলে একে সুপার ফুডের চেয়েও এগিয়ে রাখা যায়। আমলকী টক আর তেতো স্বাদের ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ একটি ফল।
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী আমলকী
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ নানান বিপাকীয় জটিলতায় ভুগছে। এরমধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম।
এই অবস্থার কারণে দেহে নানান রোগ যেমন- হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, বৃক্কের সমস্যা, মাড়ির রোগ, স্নায়ুর ক্ষতি ও চোখের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন- আমলকী শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
যেভাবে আমলকী ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের উপকার করে: আমলকী রক্তের শর্করার বিপাক বাড়ায়, রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ। এটা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিকভাবে ইন্সুলিন নিরোধক হিসেবে কাজ করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আমলকী গ্রহণের উপায়
আমলকী নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এটা স্বাস্থ্যের নানা রকম উপকার করে। যেমন- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আমলকী খাবার তালিকায় যোগ করার কয়েকটি উপায়ের মধ্যে আছে-
- আমলকীর জুস: আমলকীর তাজা রস ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকায় যোগ করা উপকারী। পুষ্টি বিজ্ঞানী অবনী বলেন, “সামান্য পরিমাণ আমলকীর রসের সাথে পানি মিশিয়ে খালি পেটে পান করা ভালো। এতে আছে আঁশ যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।”

- আমলকীর গুঁড়া: নানান-ভাবে খাবার তালিকায় যোগ করা যায়। পানির সঙ্গে আমলকীর গুঁড়া মিশিয়ে অথবা সালাদ, দই বা অন্যান্য খাবারের ওপর আমলকীর গুঁড়া ছিটিয়ে খাবার তালিকায় যোগ করা যায়।। এটা শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

- আমলকীর চা: শুকনা আমলকী টুকরা করে পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে সঙ্গে ডায়াবেটিস বান্ধব অন্য যে কোনো ভেষজ যেমন- দারুচিনি যোগ করা যেতে পারে।
- আমলকী ও মেথির বীজ: মেথি বীজ রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। আমলকীর গুঁড়ার সাথে মেথির গুঁড়া মিশিয়ে পানির সাহায্যে পান করা অথবা খাবারে সামান্য পরিমাণ বীজের গুঁড়া ছিটিয়ে গ্রহণ করা যেতে পারে। এই যৌগ ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- আমলকীর আচার: পুষ্টিবিদ অবনী কাউল বলেন, “আমলকীর আচার খাবার তালিকায় যোগ করার এক মজাদার উপায়। ঘরে তৈরি করা অথবা বাজারে আমলকীর আচার পাওয়া যায় যেখানে খুব কম পরিমাণে চিনি যোগ করা থাকে। আমলকী ও মসলার যৌগ চমৎকার স্বাদ সৃষ্টি করে যা খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
মনে রাখতে হবে
আমলকীকে সকলের জন্যই নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে খাবারে প্রতিষেধক হিসেবে আমলকী যোগ করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষত ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের অথবা কোনো ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন।
আমলকী উচ্চ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগ ও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ যা ডায়াবেটিসের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্পূর্ণ জীবনযাত্রার ধরনের ওপর নির্ভরশীল। তাই সুষম খাবার গ্রহণ নিয়মিত শরীরচর্চা, ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যের যত্নের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
আমলকী ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী তবে কোনোভাবেই ওষুধের বিকল্প নয়।
ডায়াবেটিস ছাড়াও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমলকীর উপকারিতা:
- চোখের জন্য: মধুর সঙ্গে আমলকীর রস মিশিয়ে পান করলে দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি চোখের ভিতরের চাপকে হ্রাস করে, দূরের জিনিস দেখতে পায় এবং ছানি পড়তে দেয় না। ভিটামিন-সি এবং ক্যারোটিনিক মেলানিক রাতের অন্ধত্ব কমাতে এবং আপনার দৃষ্টিকে শক্তিশালী করে।
- বিপাকের জন্য: আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা অন্ত্রের মাধ্যমে খাদ্য বহন করতে সহায়তা করে এবং আপনার অন্ত্রের গতিবেগ নিয়ন্ত্রনে রাখে। ফাইবার এছাড়াও ডায়রিয়া কমাতে পারে।
- হৃৎপিণ্ডের জন্য: এটি হৃদয়ের পেশীকে শক্তিশালী করে। অতিরিক্ত কোলেস্টরেল জমতে দেয় না, আমলকীতে ক্রোমিয়াম থাকে যা এথেরোস্ক্লোরোসিসের সম্ভাবনা কমাতে পারে এবং রক্তনালী এবং ধমনীর পর্দায় চর্বির উৎপাদন কমায়।
- চুলের জন্য: চুলের বৃদ্ধি এবং ঘন কালো করতে সাহায্য করে বলে এটি অনেক চুলের টনিকগুলিতে ব্যবহৃত হয়। চুলের শিকড়গুলিতে তাজা আমলকী বা তার পেস্ট প্রয়োগ করলে চুলের বৃদ্ধি এবং রঙ উন্নত হয়।
- মূত্র বৃদ্ধিতে: আমলা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। আমাদের কিডনি সুস্থ, মূত্রাশয় সংক্রমণ থেকে বিরত রাখতে আমলকী অপরিহার্য।
- মাসিক ঋতুচক্রের জন্য: আমলাতে উপস্থিত কিছু খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন মাসিক ঋতুচক্রের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যৌথভাবে উপকারী।
- সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে: যেহেতু এতে ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুমুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে, তাই আমলা শরীরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধের প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। আমলাতে উপস্থিত ভিটামিন-সি শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়ায়।
- বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না: আমলা শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে শরীরে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত হাইপারলিপিডেমিয়া বন্ধ করে। মুক্ত কোষগুলো যেমন বলিরেখা এবং বয়সের ছাপ পড়ে না।
আমলকীর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া-
যদিও গবেষণায় কোনো বিষাক্ত বা, নেতিবাচক প্রভাবের উল্লেখ নেই, তবুও আমলকীব্যবহার সম্পর্কিত কিছু হালকা, প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
- হাইপারঅ্যাসিডিটি ট্রিগার করতে পারে: আপনার যদি হাইপার অ্যাসিডিটি বা ভিটামিন সি খাবারের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে কোন ইতিহাস থাকে বা আগে অসুবিধা থেকে থাকে তবে আপনাকে এই ফলটি খাওয়া উচিত নয়।
- যদি আপনি বেশী পরিমাণে আমলকী খান, তাহলে মোটা হয়ে যেতে পারেন।
- হাইপারগ্লাইসেমিক: মানুষের জন্য পরামর্শ হল যে বীজযুক্ত ফল ব্যবহার এড়াতে কারণ এটি তাদের স্বাস্থ্য অবস্থা খারাপ হতে পারে।
- আমলকী খাওয়ার ফলে কিছু জনের মধ্যে যে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সেগুলি হল ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, লবনতা এবং মুখের চারপাশে ফুসকুড়ি, ত্বকের চামড়া এবং মুখ, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, এবং হালকা অভিজ্ঞতা হতে পারে।
উপসংহার
আমি আশা করছি আপনারা আমাদের (যেসকল রোগের উপকার করে আমলকী) এই প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। আরো কিছু জানার থাকলে নিচে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।