কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সকলে খুব ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আজকে আমি আপনাদেরকে কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো। তো চলুন শুরু করা যাক। আমাদের ওবেসাইট ভিজিট করতে ক্লিক করুন

 

ভূমিকা: কচু শাকের পুষ্টি উপাদান – কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়?

আমাদের আশেপাশে খুব সহজেই পাওয়া যায় এমন একটি খাদ্য দ্রব্য হলো কচু শাক। আমাদের বাসা বাড়ির আশে  পাশে সারা বছর ধরেই এই কচু শাক পাওয়া যায়। কচু গাছের  পাতা থেকে শুরু করে ডাটা এবং নিচের শক্ত অংশসহ সবই খাওয়া যায়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কচু শাক প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়।

কচু শাকের উপকারিতা

কচু শাক শুধুমাত্র সহজলভ্যই নয়, এটি স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ উপকারি। কচু শাকে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন রয়েছে। যার মধ্যে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি এবং আয়রন উল্লেখযোগ্য। এই পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে।

কচু শাকের পুষ্টি উপাদান

আমাদের দেশে পথে-ঘাটে, গ্রামে-শহরে, পুকুরের চারপাশে, মাঠে অর্থাৎ প্রায় সব জায়গায়  কচু শাক দেখতে পাওয়া যায়। এত বেশি সহজলভ্য বলে অনেকেই এই শাক খান না বা এই শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানের উৎস এই কচু শাক। সেই সাথে ফরমালিন বা অন্য কোন ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়াই এই কচু শাক পাওয়া যায়।

লৌহ উপাদানটি মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখে। মহিলাদের পিরিয়ড চলাকালীন রক্তের যে ঘাটতি দেখা দেয়, কচু শাক খেলে সেই রক্তের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায় অনেকাংশে। সাধারণত শরীরে অক্সিজেনের চলাচল ঠিক রাখতে লৌহ অর্থাৎ আয়রন প্রয়োজন হয়। শরীরের দুর্বলতা হ্রাস করতেও লৌহ খুব ভালো কাজ করে যা উদ্ভিজ্ খাবার কচু শাক থেকে পাওয়া যায়।

ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি ও ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস কচু শাক। রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে ভিটামিন-এ খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শরীরের কোন স্থানে কেটে গেলে ক্ষত স্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে ভিটামিন-সি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

গর্ভবতী মায়ের জন্য কচু শাক খুব উপকারী। এটি রক্ত পরিষ্কার করে এবং নবাগত সন্তানের ত্বক সুন্দর করতে সহায়তা করে থাকে। ফাইবারে ভরপুর হওয়ার কারণে কচু শাক খেলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সহজেই। কচু শাক খেলে বদহজম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীর জন্য কচু শাক আশীর্বাদ স্বরূপ।

ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে বলে কচু শাক খেলে ওজন বৃদ্ধি পায় না। শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করতে কচু শাক খুবই কার্যকর। কচু শাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে বিধায় এটি ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। বয়সের ছাপ এড়াতেও কচু শাক খাওয়া যায়। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে বিধায় এটি শরীরের জন্য খুব উপকারী।

কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয় ?

কচু শাক খেলে তা থেকে এলার্জি উৎপন্ন হয় না, অর্থাৎ যদি কারো আগে থেকে এলার্জি সমস্যা না থাকে তাহলে কচু শাক খেলে তার কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যদি কারো শরীরে সামান্য পরিমাণ এলার্জি জনিত সমস্যার উপস্থিতি থাকে তাহলে কচু খেলে এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি পায়। যেহেতু এলার্জি বিভিন্ন রকমের হতে পারে, চামড়ায় স্পষ্ট ভাবে ফুটেও উঠতে পারে বা রক্তে ও এলার্জি থাকতে পারে সেক্ষেত্রে যদি সমস্যা বেশি হয় তাহলে কচু শাক না খাওয়াই ভালো।

কচু শাকে থাকা অক্সালেট ও র‌্যাফাইড নামক উপাদানের জন্য এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে দুই ধরনের কচু শাক দেখা যায়। একটি সবুজ কচু শাক এবং অপরটি কালো কচু শাক। অনেকেই মনে করেন যে, কালো জাতের কচু শাক খেলে এলার্জি সমস্যা হয় না, কিন্তু তা সঠিক নয়। দুই ধরনের কচু শাকেই একই ধরনের উপাদান বিদ্যমান।

কচু শাকের অপকারিতা

বাংলাদেশে ঝোপঝাড়,পুকুরের পাশে সাধারণত ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে কচু জন্মে থাকে। বাংলাদেশে সহজলভ্য এই শাক সব বয়সের মানুষের খাওয়ার জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা কচু শাকের অপকারিতা হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। প্রিয় পাঠক কচু শাকে কি কি অপকারিতা রয়েছে তা জানতে দয়া করে সম্পূর্ণ আর্টিকেল টি পড়ুন।

যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কচু শাক না খাওয়াই ভালো। যাদের এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তারা কচু শাক খাওয়ার পরে কিছু লক্ষন দেখা দেয়, যেমন- শরীর চুলকানো, শরীরের বিভিন্ন স্থানে গোল গোল চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠার সাথে চুলকানো, চোখ চুলকানো, শরীরে লাল লাল ছোপ ছোপ দাগ ওঠা ইত্যাদি সমস্যা গুলো খেয়াল করেন তাহলে বুঝতে হবে  কচু শাকে আপনার এলার্জি রয়েছে।

কচু শাকে অক্সালেট নামক উপাদান থাকায় রান্না করা কচু শাক খেলে গলা চুলকায়। যা সহ্য করা খুবই কষ্টদায়ক। কচুতে উপস্থিত র‌্যাফাইড নামক উপাদান থাকার কারনে গলা চুলকায়। কচুর অনেক প্রজাতি রয়েছে, কিছু কচু শাকে বেশি র‌্যাফাইড থাকে সেগুলো খেলে গলা বেশি চুলকায়। সামান্য লেবু খেলে এই গলা চুলকানো থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কচু শাক অতিরিক্ত খেলে পেট খারাপ অথবা বদহজম হতে পারে। তাই পরিমাণ মতো কচুশাক গ্রহণ করাই উত্তম।

গাটি কচুর অপকারিতা

বাংলাদেশের বহুল পরিচিত একটি কচুর নাম গাটি কচু। এটি কোন শাক নয় বরং বাংলাদেশে এটি সবজি হিসেবে অধিক পরিচিত। গোল আকৃতির হয়ে থাকে গাটি কচু। বর্ষাকাল অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে এই কচু পাওয়া যায়। গাটি কচু বা ওল কচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, শ্বেতসার ইত্যাদি। যা খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

এই কচুর অপকারিতা বলতে এটি খেলে চুলকানি, শরীরে সাদা সাদা ফুসকুড়ি, এক কথায় এলার্জি জনিত সমস্যা হয়ে থাকে। যাদের শরীরে আগে থেকেই এলার্জির উপসর্গ রয়েছে তাদের এই কচু না খাওয়াই উত্তম। দাউদ, পাঁচড়া বা রক্তে এলার্জির উপস্থিতি থাকলে কচু খেলে সমস্যা বেশি হয়।

সকল বয়সের মানুষই এই কচু খেতে পারে। কাঁচা খেলে পেট খারাপ হয়ার সম্ভাবনা থাকে। রান্না করা কচু খেলেও অনেক সময় কারো কারো পেটে সহ্য হয় না, পাতলা পায়খানা বা পেট খারাপ জনিত সমস্যা হতে পারে। তাই কচু পরিমিত খাওয়াই উত্তম। যেহেতু গাটি কচু বা বই কচুতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি রয়েছে তাই এটি খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়।

কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন

কচু শাক খেতে গেলে সবার সাধারণ একটি সমস্যা হলো গলা চুলকানো। আমরা সকলেই অনুভব করতে পারি কিন্তু বুঝতে পারিনা কেন আমাদের গলা চুলকায়। কিন্তু কচু শাক খাওয়াতে গলা চুলকানোর কারন জানাটা আমাদের সকলেরই উচিত। চলুন কচু শাক খেলে কেন গলা চুলকায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-

কচু শাক খাওয়ার ফলে গলা চুলকানোর প্রধান কারন হলো- এতে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে। এই ক্যালসিয়াম অক্সালেট অনেকটা সূঁচের মত। যা খাওয়ার সময় আমাদের গলায় গেঁথে যায়। যার ফলে আমাদের গলা চুলকানোর মত সমস্যা দেখা যায়। কচু শাক ভালোভাবে না ধুয়ে এবং পর্যাপ্ত রান্না না করলে এই ক্যালসিয়াম অক্সালেট তার স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। যার ফলে গলা চুলকায়।

গলা চুলকানোর আরও একটি কারন হলো- কারো কারো এই কচু শাকে অ্যালার্জি হয়ে থাকে। অ্যালার্জি থাকার কারনে কচু শাক আমারদের শারীরিক অবস্থার সাথে খাপ খায় না, ফলে আমাদের গলা চুলকায়। তাই যাদের কচু শাকে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে কচু শাক না খাওয়াই উত্তম।

এই গলা চুলকানোর সমস্যা এড়াতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গা থেকে কচু শাক সংগ্রহ করে সেগুলো পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর সামান্য পরিমাণ লবন দিয়ে কচু শাকগুলো সিদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর যে কোন ভাবে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। রান্নার মাঝে অল্প পরিমান লেবুর রস, তেতুল বা টক জাতীয় উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে গলা চুলকানোর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

 

লেখকের শেষ কথা

কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে আমাদের এই পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আপনার ইচ্ছা থাকে আপনার জ্ঞানভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করার তাহলে অবশ্যই বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে।

আশা করি আমাদের এই পোস্টটি থেকে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যবহুল পোস্ট যদি আপনি নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আপনাকে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে হবে। আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্টে অবশ্যই সে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

কচুশাকের উপকারিতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমি শাহরিয়ার জামান (আবির) পেশায় একজন শিক্ষার্থী এবং জামান আইটি ২৪ এর CEO।

Leave a Comment